[*] কুরআনে বর্ণিত-
১. "আর আল্লাহর জন্য সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে, সুতরাং তোমরা তাঁকে সেই সব নামেই ডাকবে, আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নাম বিকৃত করে, সত্ত্বরই তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল দেয়া হবে।" — সূরা আল-আরাফ: ১৮০
২. "বলঃ তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহবান কর অথবা ‘রাহমান’ নামে আহবান কর, তোমরা যে নামেই আহবান করনা কেন, সব সুন্দর নামইতো তাঁর! তোমরা সালাতে তোমাদের স্বর উচু করনা এবং অতিশয় ক্ষীণও করনা; এই দুই এর মধ্য পন্থা অবলম্বন কর।" — সূরা আল-ইসরা: ১১০
৩. "এবং মানবমন্ডলীর মধ্যে হিত সাধন, পরহেযগারী ও মীমাংসা করে দেয়ার ক্ষেত্রে তোমরা স্বীয় শপথসমূহের জন্য আল্লাহর নামকে লক্ষ্যবস্তু বানিও না। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।" — সূরা আল-বাকারা: ২২৪
৪. "হে মানবমন্ডলী! তোমরা তোমাদের রাব্বকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তদীয় সহধর্মিনী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের উভয় হতে বহু নর ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং সেই আল্লাহকে ভয় কর যাঁর নামের দোহাই দিয়ে তোমরা একে অপরকে যাঞ্চা কর, এবং আত্মীয়-জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয়ই আল্লাহই তত্ত্বাবধানকারী।" — সূরা আন-নিসা: ১
৫. "তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে - তাদের জন্য কি কি হালাল করা হয়েছে? তুমি বলঃ পবিত্র জিনিসগুলি তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। আল্লাহর নির্দেশিত নিয়মানুযায়ী তোমরা যে সমস্ত পশু-পক্ষীকে শিকার করা শিক্ষা দিয়েছ; তারা যা শিকার করে আনে তা তোমরা খাও এবং ওগুলিকে শিকারের জন্য পাঠানোর সময় আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর।" — সূরা আল-মায়েদা: ৪
[*] হাদিসে বর্ণিত-
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলার নিরানব্বই নাম আছে, এক কম একশত নাম। যে ব্যক্তি এ (নাম) গুলোর হিফাযাত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ্ বিজোড়। তিনি বিজোড় পছন্দ করেন। — সহীহ বুখারী: ৬৪১০
[*] লক্ষণীয়- আর,আল, আস কেন?
আল্লাহর সুন্দর নামগুলোর মধ্যে যেমন — আর-রাহমান, আল-মালিক, আস-সালাম — এরূপ প্রতিটি নামের শুরুতে ব্যবহৃত “আর”, “আল”, বা “আস” আসলে আরবি ভাষার নির্দিষ্ট আর্টিকেল “ال” (আল) এর উচ্চারণভেদ। এই “ال” ইংরেজি “the” এর মতো একটি নির্দিষ্টতা নির্দেশক উপসর্গ, যা কোনো বস্তু বা নামকে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়। তবে, এই আর্টিকেলটির উচ্চারণ সব সময় একরকম হয় না। এর উচ্চারণ নির্ভর করে “ال”–এর পরবর্তী অক্ষরটির ওপর। এই নিয়মকে কেন্দ্র করে আরবি ভাষার ২৮টি বর্ণকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে: সূর্যাক্ষর (Sun Letters / Huruf Shamsiyyah) এবং চন্দ্রাক্ষর (Moon Letters / Huruf Qamariyyah)। প্রতিটি শ্রেণিতে রয়েছে ১৪টি করে অক্ষর বা বর্ণ। যেসব অক্ষরের আগে “ال” বসলে “ل” উচ্চারিত হয় না এবং পরবর্তী বর্ণ বা অক্ষরে shadda (ّ) বাتَشْدِيد (তাশদীদ)বসে, সেগুলোকে সূর্যাক্ষর বলা হয়। এর উদাহরণ হলো: الرَّحْمٰن → আর-রাহমান, السَّلَام → আস-সালাম, এবং الشَّمْس → আশ-শামস (সূর্য)। এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, “ল” এর উচ্চারণ না হয়ে পরবর্তী অক্ষর দ্বিত্ব হয়ে উচ্চারিত হয়। যেমন “শ” এর ওপর শাদ্দা বসে “শ্-শা” হয়ে যায় “শ-শা”।
অন্যদিকে, যেসব বর্ণ বা অক্ষরের আগে “ال” বসলে “ل” স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হয় এবং পরবর্তী বর্ণ বা অক্ষরে কোনো shadda/তাশদীদ বসে না, সেগুলোকে চন্দ্রাক্ষর বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ: الْمَلِك → আল-মালিক এবং الْقَمَر → আল-কামার (চাঁদ)। এখানে “ল” স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হয়, এবং কোনো দ্বিত্বতা ঘটে না।
এই উচ্চারণভিত্তিক বিভাজন মূলত আরবি ভাষার একটি ধ্বনিগত নিয়ম, যা কুরআন তিলাওয়াত, দোআ এবং আল্লাহর নামসমূহ সঠিকভাবে উচ্চারণ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নিয়মে সূর্য (الشَّمْس) ও চাঁদ (الْقَمَر) শব্দদ্বয়ের উচ্চারণ প্যাটার্ন অনুসারে শ্রেণিগুলো নামকরণ করা হয়েছে — ফলে যেসব বর্ণ বা অক্ষরের সঙ্গে “ল” লুকায়, তারা সূর্যাক্ষর; আর যেসবের সঙ্গে “ল” প্রকাশ পায়, তারা চন্দ্রাক্ষর।
সংজ্ঞা অনুযায়ী, সূর্যাক্ষর হলো: যেসব বর্ণ বা অক্ষরের আগে “ال” বসলে “ل” উচ্চারিত হয় না এবং পরবর্তী বর্ণ বা অক্ষরে shadda (ّ) বা تَشْدِيد (তাশদীদ)বসে। আর চন্দ্রাক্ষর হলো: যেসব বর্ণ বা অক্ষরের আগে “ال” বসলে “ل” উচ্চারিত হয় এবং কোনো shadda/তাশদীদ বসে না। এই মৌলিক পার্থক্যটি শেখা ও চর্চা করা জরুরি, বিশেষ করে আরবি শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে।